Thursday, November 21, 2024
Home সারাদেশ যাকাত আদায় না করার ভয়াবহ পরিণাম ॥ হাফিজ মাছুম আহমদ দুধরচকী

যাকাত আদায় না করার ভয়াবহ পরিণাম ॥ হাফিজ মাছুম আহমদ দুধরচকী

যাকাত ইসলামের পঞ্চস্তম্ভের একটি। যা নেসাব পরিমাণ সম্পদের অধিকারী প্রত্যেকের ওপর আদায় করা ফরজ। নেসাব বলতে বোঝানো হয়, সাড়ে সাত তোলা স্বর্ণ বা সাড়ে বায়ান্ন তোলা রৌপ্য বা তৎসমমূল্যের সম্পদকে।
এ পরিমাণে কারো সম্পদ একবছর মালিকানায় থাকলে ঐ বছরই তাকে সম্পদের আড়াই শতাংশ যাকাত দিতে হয়। ইসলামে যাকাত নেয়া হয় দারিদ্র্য বিমোচনের লক্ষ্যে।
প্রিয়নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, “যাকাত নেয়া হবে ধনীদের কাছ থেকে এবং অভাবীদেরকে ফিরিয়ে দেয়া হবে” (বুখারি)।
এই হাদিসটি আমাদেরকে যাকাত সম্পর্কে একটি মৌলিক ধারণা দেয়, তা হলো, যাকাত ধনীদের কাছ থেকে নিয়ে গরিবদের কাছে ফিরিয়ে দেয়ার নাম। অন্যদিকে ধনীদের কাছ আদায়ের যাকাত ব্যাহত হলে সমাজের দারিদ্রসীমা কিন্তু বর্ধিত হয়। যাকাত আদায় না করার যেমন পার্থিব জীবনে ভয়াবহ পরিণাম রয়েছে, তেমনি রয়েছে আখেরাতেও।
যাকাত আদায়ের ব্যাপারে সতর্কবাণী উচ্চারণ করে পবিত্র কোরআনে বলা হয়েছে, আর যারা স্বর্ণ ও রৌপ্য পুঞ্জিভূত করে এবং আল্লাহর রাস্তায় ব্যয় করে না, তাদেরকে কঠিন আযাবের সুসংবাদ প্রদান করুন। সেদিন স্বর্ণ ও রৌপ্য জাহান্নামের আগুনে উত্তপ্ত করা হবে এবং তা দ্বারা তাদের ললাট, পার্শ্বদেশ ও পৃষ্ঠদেশে দাগ দেয়া হবে। সেদিন বলা হবে, “এটা তা, যা তোমরা নিজেদের জন্য পুঞ্জিভূত করেছিলে।
অতএব তোমরা যা পুঞ্জিভূত করেছিলে, তা আস্বাদন করো’ (সূরা তাওবা ৩৪-৩৫)।  এ আয়াতে যাকাত আদায় না করার ভয়ংকর পরিণতির বর্ণনা উঠে এসেছে। এক হাদিসে নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, “যাকে আল্লাহ পাক সম্পদ দিয়েছেন, কিন্তু সে তার যাকাত আদায় করে না, উক্ত সম্পদকে কিয়ামতের দিন তার জন্য বিষধর সাপে পরিণত করা হবে।
যার চোখের ওপর কালো দাগ আঁকা থাকবে। অতঃপর তা স্বীয় চোয়ালদ্বয় দ্বারা তাকে কামড়াবে এবং বলতে থাকবে, আমি তোমার ধনভাণ্ডার। আমিই তোমার সম্পদ” (বুখারি)।যাকাত আদায়ের ভয়াবহ পরিণতি প্রসঙ্গে অপর হাদিসে এভাবেই এসেছে, “যেসকল স্বর্ণ ও রৌপ্যের মালিক তার হক (যাকাত) আদায় করে না, কিয়ামতের দিন তার জন্য আগুনের বহু পাত তৈরি করা হবে এবং সেগুলোকে জাহান্নামের আগুনে উত্তপ্ত করা হবে।
এরপর তার পাঁজর, কপাল ও পিঠে তা দিয়ে দাগ দেয়া হবে। যখনই তা ঠা-ঠা হয়ে যাবে, সাথে সাথে তা পুনরায় উত্তপ্ত করা হবে। সেদিন, যার পরিমাণ হবে পঞ্চাশ হাজার বছরের সমান। যতদিন বান্দাদের বিচার নিষ্পত্তি না হয়, তার শাস্তি ততদিন চলমান থাকবে। অতঃপর সে তার পথ ধরবে, হয়ত জান্নাতের দিকে, নয়ত জাহান্নামের দিকে” (মুসলিম)। এই হাদিস থেকে আমরা জানতে পারি, আমাদের জান্নাত-জাহান্নাম নির্ধারণে এক যাকাতই যথেষ্ট।
ইসলামের ইতিহাসের পাতা খুললেই আমরা দেখতে পাই, খোলাফায়ে রাশেদীনের যুগেও কিছুসংখ্যক লোক যাকাত আদায়ে অবহেলা করত এবং এদের বিরাট একটি অংশ হযরত আবু বকর রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু- এর আমলে যাকাত আদায়ে অস্বীকৃতি জানায়।
দ্বীনের অপরিহার্য একটি বিষয় অস্বীকারের কারণে তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে হযরত আবু বকর রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু বলেন, “আল্লাহর কসম, আমি সেসব লোকের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করব, যারা নামায ও যাকাতের মধ্যে পার্থক্য করবে, কেননা যাকাত হলো সম্পদের অধিকার” (বুখারি ও মুসলিম)। ইসলামের প্রথম খলিফার এই উক্তিটুকুই প্রমাণ করে যাকাত আদায় করা একজন মুসলমানের জন্য কতটা গুরুত্বপূর্ণ।
এছাড়া পবিত্র কোরআনে ও হাদিস শরিফে যে ভয়াবহতার কথা উল্লেখ আছে, তা নিঃসন্দেহে অপরিমেয়। তাই কিয়ামত দিবসে ভয়াবহ শাস্তি থেকে রেহাই পেতে চাইলে সম্পদের নির্ধরিত যাকাত অবশ্যই আদায় করতে হবে। আল্লাহ পাক যেন প্রত্যেক ধনীকে যাকাত আদায়ের মাধ্যমে অভাবির হক ফিরিয়ে দেয়ার তাওফিক দেন, আমিন।

লেখক: বিশিষ্ট ইসলামী চিন্তাবিদ লেখক ও কলামিস্ট হাফিজ মাছুম আহমদ দুধরচকী।

RELATED ARTICLES

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -

Most Popular

Recent Comments